ওয়ে গনা রের মহাদেশীয় সঞ্চালন তত্ত্বের প্রমাণ গুলি নীচে আলোচনা করা হল –
1. উপকুলরেখার পরস্পর জোড় বা জিগ- স – ফিট:-
আটলান্টিক মহাসাগরের বিপরীতে উপকুলরেখার পারস্পরিক জোড় ওয়েগনার কে মহী সঞ্চরণ ধারণায় উৎসাহিত করেছে। ওয়েগনার এর মতে অনেক আগে মহাসাগরের উভয় স্থলভাগ পরস্পর সংযুক্ত ছিল। কোনো বস্তু ভেঙে গেলে যেমন তা জোড়া লাগানো যায়। তেমনই মহী সঞ্চরণের ফলে বিচ্ছিন্ন দুই মহাদেশের উপকূলের জোড় লাগানো সম্ভব। যেমন – ব্রাজিলের রক অন্তরীপ গিনি উপসাগরে ও পশ্চিম আফ্রিকার স্ফীত অংশ মেক্সিকো উপসাগরে জোড়া লাগানোর সম্ভাবনার কথা বলেছেন। সুতরাং এই জিগ- স – ফিট মহীসঞ্চরনের উল্লেখযোগ্য প্রমাণ।
2. ভুগঠনিক সাদৃশ্য:-
আটলান্টিকের দুই বিপরীত উপকূলের মধ্যে ভূমিরূপ গত কিছু সাদৃশ্য দেখা গেছে। আটলান্টিকের পশ্চিম ও পূর্ব দিকে ক্যালিডোনিয়া- ন এবং হার্সিনিয়ান পর্বত গঠন গত ভাবে সমপ্রকৃতির। উত্তর আমেরিকার অ্যাপেলেশিয়ান পর্বতমালার উপকূলীয় অঞ্চলে এসে শেষ হয়ে গেছে এবং পরবর্তীকালে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে হারসিনিয়ান পর্বতমালার মধ্য দিয়ে তার গতি বজায় রেখেছে। একইভাবে ক্যালেডিয়ান পর্বতমালা উত্তর আমেরিকায় দক্ষিণ – পশ্চিম থেকে উত্তর – পূর্বে উপকূলীয় অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং আটলান্টিকের অপরপারে আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডে ঠিক একই অভিমুখে তাদের উদ্ভব ঘটেছে। আটলান্টিকের বিপরীত দুই উপকূলের পর্বতমালা ও অন্যান্য
ভুপ্রাকৃতিক চরিত্রের এরকম মিল মহী সঞ্চরন তত্ত্বের সপক্ষে প্রমাণ দেয়।
3. উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবাশ্ম গত সাদৃশ্য:-
ব্রাজিল,ভারত,দক্ষিণ আফ্রিকা,অস্ট্রেলিয়া, জুড়ে গ্লোসোপটেরিস নামক একপ্রকার ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ জীবাশ্ম পাওয়া যায়। জিব বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী জলের ওপর দিয়ে এসকল উদ্ভিদের বংশ বিস্তার সম্ভব নয়। অথচ উপরোক্ত অঞ্চল গুলির মধ্যে সমুদ্রের ব্যবধান রয়েছে। তাই এটা বলা যেতে পারে পূর্বে এই ব্যবধান না থাকার কারণে ই এই বংশ বিস্তার সম্ভব হয়েছে।
4. পুরা জলবায়ু:-
প্রাচীন জলবায়ুর নিদর্শন ওয়েগনারের মহীসঞ্চরন ধারণার সপক্ষে জোরালো যুক্তি দেয়। উত্তর আমেরিকার অ্যাপেলেশিয়ান অঞ্চলে পার্মিয়ান কর্বনিফেরাস যুগের কয়লাস্তর সঞ্চিত আছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, ওই সময় ওই অঞ্চলে নিরক্ষীয় জলবায়ু বিরাজ করতো। আবার ওই একই অঞ্চলের পাললিক শিলা স্তরের সঙ্গে পরবর্তী যুগে সৃষ্ট লবণের স্তর পরিলক্ষিত হয়,যা শুষ্ক জলবায়ুর অবস্থাকে নির্দেশ করে।
5. অক্ষাংশগত পার্থক্য:-
বিভিন্ন স্থানের অক্ষাংশগত পার্থক্য ও ওয়েগনার এর মতবাদের সমর্থনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। কোনো একটি স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করার বেশ কিছু বছর পর পুনরায় ওই স্থানের অক্ষাংশ নিৰ্ণয় করলে তাদের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
6. লেমিং প্রাণীর গতিবিধি:-
উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়া য় বসবাসকারী ক্ষুদ্র লর প্রাণী গোষ্ঠীর মধ্যে এক অদ্ভুত প্রকৃতি লক্ষ্য করা যায়। অত্যধিক বংশবৃদ্ধির ফলে তাদের সংখ্যাধিক্যের জন্য তারা পশ্চিমে ছুটে যায় ও সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, এই প্রকার প্রাণীরা মনে করে যে, নরওয়ে উপকূল বরাবর সমুদ্রের পরিবর্তে স্থলভাগ রয়েছে। কিন্তু সেখানে রয়েছে সমুদ্র।মনে করা হয় প্রাচীনকালে আটলান্টিকের দুই উপকূল যখন সংযুক্ত ছিল তখন এই ধরনের প্রাণীরা সমগ্র অঞ্চল জুড়ে হা টা চলা করতো।কিন্তু পরবর্তীকালে দুই তীরের বিচ্ছিন্ন করণ তাদের অজ্ঞাত থেকে যায় ও তাদের এই আচরণ সৃষ্টি করে।
7. পুরা চুম্বকীয় প্রমাণ:-
বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক যুগে মেরুবিন্দুর যে স্থানান্তর ঘটেছে, তা পরাচুম্বকে র সাহায্যে প্রমাণ করা যায়। যেমন – টারসিয়ারি যুগের আগের শিলা স্তরের পরাচুম্বকের যেসব নিদর্শন দেখা গেছে সেগুলি থেকে বোঝা যায় বর্তমান মেরুর সঙ্গে পুরচুম্বকিয় মেরুর অবস্থানে অনেক পার্থক্য আছে।
8. হিমবাহ গঠিত ভূমিরূপের সাদৃশ্য:-
ওয়ে গনা রে র মতে দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা,ভারত ও অস্ট্রেলিয়া কর্বনিফেরাস থেকে পারমিয়ান যুগ পর্যন্ত একসঙ্গে পরপর জুড়ে একটি সুবিস্তৃত মহাদেশ তৈরি করেছিল। ফলে সমগ্র ভূখণ্ড গুলিতে এখন একই ধরনের মহাদেশীয় হিমবাহ গঠিত ভূমিরূপ লক্ষ করা যায়।
9. প্রবাল প্রাচীর এর অবস্থান:-
উষ্ণ মণ্ডলের সমুদ্রে প্রবাল প্রাচীর গড়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে এই সীমারেখার বাইরে অনেক প্রবাল প্রাচীরের অবস্থান থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, অতীতে ওই এলাকাগুলি নিশ্চই নিরক্ষরেখা র কাছাকাছি উষ্ণ মন্ডলে ছিল এবং তারপর মহাদেশীয় সঞ্চোরনের জন্য ওগুলি বর্তমানে উষ্ণ মণ্ডলের বাইরে শীতল অঞ্চলে উপস্থিত হয়েছে।
উল্লিখিত বিভিন্ন প্রমাণের ভিত্তিতে ওয়েগনার মহীসঞ্চরণ তত্ত্বে প্যানজিয়ার অস্তিত্ব এবং পরবর্তী সময়ে সেটি ভেঙে বিভিন্ন খন্ড তথা মহাদেশে ভাগ হয়ে সঞ্চরিত হওয়ার যুক্তি দেখিয়েছেন।
“ওয়েগনার এর মহাদেশীয় সঞ্চালন তত্ত্বের সপক্ষে প্রমাণ গুলি বর্ণনা কর।”-এ 2-টি মন্তব্য