ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে? সৃষ্টির কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে জানুন

ঘূর্ণিঝড় কাকে বলে? ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কারণ লেখো।

 ঘূর্ণিঝড়(Cyclone):

কোনো অল্প পরিসর জায়গায় উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে হঠাৎ করে বায়ুর চাপ কমে গেলে শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি করে। এই ঝড়ে বায়ু উত্তর গোলার্ধে বামদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ডানদিকে ঘুরতে থাকে বলে একে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়।

** ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কারণগুলি হল –

1. ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি।
2. সমুদ্র জলতলের উষ্ণতা বৃদ্ধি।
3. বাতাসের দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ।
4. গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি।
5. আকাশে গাঢ়
কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি।
6. জলীয়বাষ্প এর ঘণিভবনের সময় লীনতাপের কারণে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি।
7. চাপের সমতা রক্ষার জন্য চারদিকের
উচ্চচাপের বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে কুণ্ডলী আকারে তীব্র বেগে ছুটে যাওয়া।
8. গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ।

প্রশ্ন: ঘূর্ণিঝড়ের ফলে কী ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি হয়?

উত্তর: ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নানা দিক থেকে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যেমন –

1. বন্যা সৃষ্টি:

উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রবল ঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস বন্যার সৃষ্টি করে।
যেমন – ওড়িশা উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রায়ই বন্যার সৃষ্টি হয়।

2. কৃষিকাজের ক্ষতি:

সমুদ্রের লবণাক্ত জল অনেক সময় কৃষিজমিতে প্রবেশ করায় মাটির লবনতার পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে, কৃষিকাজের অসুবিধা হয়।
যেমন – আয়লার প্রভাবে সুন্দরবন অঞ্চলে বেশ কয়েকবছর ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়ে ছিল।

3. জীবনহানি:

বাড়ি ধসে, গাছপালা চাপা পড়ে, বিদুৎস্পৃষ্ট হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে।

4. পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি:

প্রবল ঝড়ের ফলে রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

5. বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি:

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বহু পশুপাখি (জীবের) মৃত্যু ঘটে বলে বস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।

6. ধনসম্পত্তির বিনাশ ও বিপর্যস্ত জনজীবন:

প্রবল ঝড়ে বাড়িঘর ভেঙে যায়, বিদুৎ এর তার ছিড়ে যায়, পোস্ট ভেঙে পড়ে। কৃষিজমির ও ক্ষতি হয়।ফলে ব্যাপকভাবে সম্পত্তিহানী ঘটে।

6. মৎস্যজীবিদের ক্ষতি:

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে উপকূল অঞ্চলের মৎস্য জীবিদের জল, নৌকা, ট্রলার, বাড়িঘর নষ্ট হয়ে জীবন ও জীবিকার চরম ক্ষতি হয়।

 

দুর্যোগপূর্ণ পৃথিবী:

🌟 2009 সালের আয়লা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় 1 লক্ষের ও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট প্রবল বৃষ্টির ফলে দার্জিলিং এ পাহাড়ে ধস নেমে 22 জন মানুষ মারা যায়। পুরো রাজ্যে প্রায় 3-5 লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

🌟এছাড়া, 2008 সালের ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের প্রভাবে ইরাবতী ব – দীপীয় অঞ্চল গুলি ( ইয়াঙ্গণ, লাবুটলা প্রভৃতি) ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। 1 লক্ষের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল এবং প্রায় 43,000 এর বেশি মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

🌟 1999 সালের ওড়িশার সাইক্লোনের পর অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘূর্ণিঝড় হল 2013 সালের পিলিন। 10 অক্টোবর ওড়িশার গোপালপুর উপকূলে আছড়ে পড়ে এই ঘূর্ণিঝড়টি। প্রায় 5,50,000 মানুষ কে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল পূর্বাভাস পাওয়ার পর। এর প্রভাবে থাইল্যান্ড, মায়ানমার এবং ভারতের বহু অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আরও পড়ুন

জোয়ার ভাটা কাকে বলে? চিত্রসহ জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর| High and low tide, It’s causes and effects

ভূমিকম্প কাকে বলে? ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল গুলি আলোচনা করো। Earthquake Causes and it’s effect

🌟ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু এর ফলে 2016 সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কা ও
বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। শ্রীলঙ্কায় প্রায় 201 জনের এবং বাংলাদেশে প্রায় 26 জনের মৃত্যু হয়েছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের তামিলনাড়ু,অন্ধ্রপ্রদেশ,কেরালা এবং ওড়িশা উপকূলে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়।

🌟 2014 সালের হুদহুদ ঘূর্ণিঝড় বিশাখাপত্তনম, অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ে। প্রায় 70,000 কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

* ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগের ওপর তীব্রতা নির্ভর করে। যেমন, সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ 62-88 কিমি/
ঘণ্টা, অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ 118-221 কিমি/ ঘণ্টা, সুপার সাইক্লোনের গতিবেগ 222 কিমি/ ঘণ্টা বা তার ও বেশি।

মন্তব্য করুন