Q.জল দূষণ কাকে বলে?
Ans. পরিবেশের অবাঞ্ছিত পদার্থ জলে মিশে তার ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটায়, যার ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণীর ক্ষতি হয় এবং মানুষের ও ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়। জলের ওই অবস্থাকে বলে জল দূষণ।
Q.জলবাহিত দুটি রোগের নাম লেখো?
Ans. জলবাহিত দুটি প্রধান রোগের নাম হল ভাইরাল হেপাটাইটিস ও ভাইরাল পোলিও।
Q.ইউ ট্রোফিকেশন কী?
Ans. যে পদ্ধতিতে কোনো জলাশয় বা পুকুরে রাসায়নিক পদার্থ প্রধানত ফসফেট মেশার ফলে জলে জলজ উদ্ভিদের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় ও উদ্ভিদ ও প্রাণী মারা যায়, জলাশয় ভরাট হয়ে অগভীর জলাভূমিতে পরিণত হয়। তাকে ইউ ট্রোফিকেশন বলে।
Q.জল দুষণের কারণগুলি আলোচনা কর?
Ans. জল দূষণের বিভিন্ন কারণগুলি নিচে আলোচনা করা হল –
ক) গৃহস্থালির বর্জ্য পদার্থ থেকে জল দূষণ: গ্রাম বা শহরের গৃহস্থালির বিভিন্ন আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ, যেমন – খাবারের টুকরো, আনাজের খোসা, প্লাস্টিক, শৌচাগারের মলমূত্র প্রভৃতি নদীতে, পুকুরে বা জলাশয়ে মিশে জলকে দূষিত করে তোলে।
খ) কৃষিক্ষেত্র থেকে জল দূষণ:- কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ঔষধপত্র
প্রভৃতি বৃষ্টির জলে ধুয়ে নদী, জলাশয়, সমুদ্রে মিশে জলের দূষণ ঘটায়।
গ) কলকারখানার বর্জ্য থেকে জল দূষণ:- কলকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক আবর্জনা, যেমন – ক্লোরিন, অ্যামোনিয়া, ফেন ল, সায়ানাইড প্রভৃতি নালা নর্দমা দিয়ে নদী বা সমুদ্রের জলে মিশে জলকে দূষিত করে।
ঘ) খনিজ তেল থেকে দূষণ:- সমুদ্রে খনিজ তেল পরিবহনকারী জাহাজে দুর্ঘটনা ঘটলে খনিজ তেল জলে মিশে দূষিত হয়।
ঙ) অ্যাসিড বৃষ্টি:- অত্যধিক যানবাহন চলাচলের ফলে বায়ুদূষণ ঘটে। আর সেই বায়ুদূষণের কারণে বাতাসে ভাসমান বিষাক্ত গ্যাস যেমন – নাইট্রোজেন অক্সাইড ও সালফার – ডাই – অক্সাইড বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে বিক্রিয়া করে যে অ্যাসিড তৈরি করে, তা জলকে দূষিত করে।
চ) আর্সেনিক দূষণ:- মাটির অগভীর স্তর থেকে অতিরিক্ত জল অনিয়ন্ত্রিতভাবে তুলে নিলে মাটির নীচে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়। ফলে মাটির স্তরে থাকা নানারকম আর্সেনিক ও ক্লোরাইড যৌগ বাতাসের সংস্পর্শে এসে বিষাক্ত যৌগ তৈরি করে, যা নলকূপের জলের সঙ্গে মিশে জল দূষণ ঘটায়।
Q.জলদূষণের ফলাফল গুলি লেখো?
উ: জলদূষণের ফলাফল বা প্রভাবগুলি হল –
ক) জলবাহিত রোগসমূহ:- জলদূষণের ফলে পুকুর, নদীর মাছেরা মারা যায় ও মানুষের বিভিন্ন জলবাহিত রোগ যেমন – কলেরা, ডায়ারিয়া, আন্ত্রিক প্রভৃতি হয়।
খ) সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব:- জলদুষণে সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলের ওপর বিশেষ প্রভাব পড়ে বলে ক্ষুদ্র প্ল্যাঙ্কটন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাছ ও সামুদ্রিক পাখির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।
গ) কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব:- কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত দূষিত জল উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুদের ধ্বংস করে। ফলে মৃত্তিকার উর্বরতা নষ্ট হয়, যার কারণে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়।
ঘ) জলজ বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব:- দূষিত জলে অক্সিজেন ও পুষ্টি মৌলের অভাব হলে জলজ প্রাণী সহ শৈবাল, কচুরিপানা ইত্যাদি জলজ উদ্ভিদের মৃত্যু ঘটে।
ঙ) পাখিদের ওপর প্রভাব:- দূষিত জলের মাছ, পোকামাকড় ভক্ষণ করলে পাখিদের ওড়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়, পালক খোসে যায়, পাখিদের মারা যাওয়ার ও সম্ভবনা দেখা যায়।
Q.জলদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়গুলি লেখো?
Ans.জলদূষণ রোধ করা যায় নিম্নলিখিত উপায়ে –
ক) আবর্জনা নিক্ষেপ বন্ধ করা:- পুকুর, নদী, হ্রদ, খালবিল বা অন্যান্য জলাশয়ে নোংরা আবর্জনা নিক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
খ) অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের প্রয়োগ কমানো:- কৃষিকাজে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে হবে ও সেই কীটনাশক যাতে জলাশয়, পুকুরে না মেশে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
গ) সাবান, ডিটারজেন্টের ব্যবহার বন্ধ করা:- পুকুর, জলাশয়ে সাবান, ডিটারজেন্টের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
ঘ) মৃতদেহ নিক্ষেপ বন্ধ করা:- জলাশয়, নদীতে জীবজন্তুর মৃতদেহ নিক্ষেপ করা বন্ধ করতে হবে।
ঙ) শিল্পকেন্দ্রের বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ:- শিল্পকেন্দ্র থেকে নির্গত নোংরা, আবর্জনা ও দূষিত জল যাতে নদী বা সমুদ্রে না ফেলা হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
চ) জলাশয় ভরাট বন্ধ করা:- মানুষেরা নোংরা, আবর্জনা ফেলে পুকুর বা জলাশয় ভরাট যাতে না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে।