প্রশ্ন: কৃষি ও কৃষি প্রণালী কাকে বলে? ( Define Agriculture and Agricultural process.)
উত্তর: * অর্থ:- ‘ কৃষি ‘ শব্দটি সংস্কৃত ‘ কৃষ ‘ ধাতু থেকে এসেছে। অনুরূপে ল্যাটিন শব্দ ‘ager'(field, ক্ষেত্র) থেকে’Agriculture’ শব্দটির উদ্ভব হয়েছে।
*সংজ্ঞা:- অধ্যাপক জিমার ম্যান (ZImmermann) এর মতে – জমিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করে মানুষ যখন উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের স্বাভাবিক জন্ম ও বৃদ্ধির প্রসার ঘটিয়ে নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজ দ্রব্যাদির উৎপাদন করে, তখন তাকে কৃষি বলে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:- ১) মানুষের অপরিহার্য দ্রব্যের জোগান দেয়। ২) কৃষির মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। ৩) গবেষণামূলক কাজের সুযোগ বেশি। ৪) কৃষিজাত বিভিন্ন উপকরণ শিল্পের কাঁচামাল এর উৎস রূপে কাজ করে।
কৃষিপ্রনালী:-
সংজ্ঞা:- পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের তারতম্য, চাহিদা, দেশের আয়তন ও জনসংখ্যার ঘনত্ব, আর্দ্রতার তারতম্য, কৃষকের অভিজ্ঞতা, কৃষি প্রযুক্তির প্রয়োগ প্রভৃতির ভিত্তিতে যে বিভিন্ন প্রকার কৃষি ব্যবস্থা গঠিত হয়, সেই ব্যবস্থাকে কৃষি প্রণালী বলে।
উদাহরণ:- নিবিড় কৃষি, ব্যাপক কৃষি বানিজ্যিক কৃষি প্রভৃতি।
প্রশ্ন: আর্দ্র কৃষি কাকে বলে?( Define Humid or wet Farming.)
উত্তর: সংজ্ঞা:- যে কৃষি ব্যবস্থায় শস্যের উৎপাদন প্রধানত বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল এবং জলসেচের সুযোগ ও প্রয়োজন সীমিত, সেই বারি নির্ভর কৃষি ব্যবস্থাকে আর্দ্র কৃষি বলে।
অবস্থান:- পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশের মৌসুমী বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে আর্দ্র কৃষি প্রচলিত রয়েছে।
বৈশিষ্ট্য:- ১) বর্ষণের পরিমাণ ও ব্যাপ্তি আর্দ্র কৃষি ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। ২) জলসেচের প্রয়োজনীয়তা সীমিত।
৩) কৃষকের দক্ষতা পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
প্রধান ফসল:- ধান ও পাট হল এই কৃষির প্রধান উৎপন্ন ফসল।
প্রশ্ন: শুষ্ক কৃষি কাকে বলে? (Define Dry Farming.)
উত্তর: সংজ্ঞা:- পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমান ৫০ সেমির কম, সেই শুষ্ক পরিবেশে, জলের সল্প যোগানের উপর নির্ভর করে যে কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়, তাকে শুষ্ক কৃষি বলে।
অবস্থান:- দক্ষিণ ও পশ্চিম (রাজস্থান, পাঞ্জাব গুজরাট)।
বৈশিষ্ট্য:- ১) বৃষ্টির জল যাতে মাটির গভীরে সহজে প্রবেশ করে তার জন্য গভীর ভাবে লাঙ্গল দেওয়া হয়। ২) খরা সহ্য কারী শস্য চাষ করা হয়। ৩) শুষ্ক কৃষিতে ফলন কম হয়।
প্রধান ফসল:- গম, তুলা ডাল প্রভৃতি।
প্রশ্ন: স্থানান্তর কৃষি কাকে বলে? (Define Shifting Agriculture.)
উত্তর: সংজ্ঞা:- পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যক্তি মালিকাহীন অনির্দিষ্ট জমিতে প্রতিকূল পরিবেশে কয়েক বছর অন্তর বনজঙ্গল পুড়িয়ে আদিবাসী ও উপজাতি গোষ্ঠী দ্বারা যে ভ্রাম্যমান বা পরিযায়ী কৃষি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তাকে স্থানান্তর কৃষি বলে।
অবস্থান:- ক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল জলবায়ুর অন্তর্গত আফ্রিকা, ক্রান্তীয় দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা
(ব্রাজিল,ভেনেজুয়েলা), এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় (ভারত,বাংলাদেশ,ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি) আদিম উপজাতির মধ্যে স্থানান্তর কৃষি প্রচলিত আছে।
বৈশিষ্ট্য:- ১) এই কৃষি ব্যবস্থায় পরপর তিন চার বছর অন্তর জমি বদল করা হয়। ২) যাযাবর শ্রেণীর মানুষজন বা উপজাতি গোষ্ঠীভুক্ত লোকজন এ জাতীয় চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। ৩) ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে গোষ্ঠী মালিকানার পরিবর্তে গোষ্ঠী মালিকানা বলবৎ হয়। ৪) এই কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার একেবারেই হয় না।
৫) কৃষি জোতগুলি আকৃতিতে অনেক ছোট হয়।
উদাহরণ:- উত্তর – পূর্ব ভারতে এই ধরনের কৃষি লক্ষ্য করা যায়।
প্রশ্ন: নিবিড় কৃষিকাজ কাকে বলে?(Define Intensive Subsistence Farming.)
উত্তর: সংজ্ঞা:- যতটা সম্ভব বেশি শ্রম ও মূলধন বিনিয়োগ করে কম পরিমাণ জমি থেকে সবথেকে বেশি ফসল উৎপন্ন করাকে নিবিড় বা প্রগাঢ় কৃষি বলা হয়।
অবস্থান:- এশিয়ার মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চল অর্থাৎ দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এই কৃষি ব্যবস্থা দেখা যায়।
উৎপন্ন ফসল:- এই কৃষির প্রধান ফসল ধান।
বৈশিষ্ট্য:- ১) জমির আয়তন ছোট হয়। ২) কৃষি শ্রমিক সহজলভ্য।
৩) কৃষিক্ষেত্রে ছদ্ম বেকারত্বের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। ৪) কৃষিতে প্রাকৃতিক পরিবেশের সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ৫) হেক্টর প্রতি উৎপাদন বেশি। ৬) জনসংখ্যা বেশি হওয়ার জন্য মাথাপিছু জমির পরিমাণ সীমিত। ৭) কৃষি পণ্যের উৎপাদন ব্যয় সামগ্রিক ভাবে বেশি।
সুবিধা:- ১) কম পরিমাণ জমি থেকে বেশি পরিমাণ ফসল ফলানো সম্ভব হয়।
২) হেক্টর প্রতি উৎপাদন বেশি।
৩) যেহেতু এই কৃষি ব্যবস্থা পুরোপুরি শ্রম নির্ভর তাই মূলধন বেশি বিনিয়োগ করতে হয় না।
অসুবিধা:- ১) কৃষি জমি গুলি আয়তনে খুবই ছোট।
২) খরা, বন্যা এবং বিভিন্ন প্রকার রোগ ও পো আক্রমণে প্রায়শই ফসলের ক্ষতি হয়।
৩) কৃষকেরা বাজারে ন্যায্য দাম পায় না।
৪) মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ যথেষ্ট কম।
প্রশ্ন: ব্যাপক কৃষি কাকে বলে?(Define Extensive Agriculture.)
উত্তর: সংজ্ঞা:- যে কৃষি ব্যবস্থায় কম কায়িক শ্রম ও বেশি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সাহায্যে তুলনামূলক ভাবে একই সঙ্গে বিশাল পরিমান জমি চাষ করা হয়, তাকে ব্যাপক কৃষি বলে।
অবস্থান:- মধ্য অক্ষ্যংসের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গম বলয়, দক্ষিণ আমেরিকার পম্পাস তৃণভূমি র বিস্তীর্ণ অঞ্চল, দক্ষিণ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়ার দক্ষিণাংশ এই কৃষির অন্তর্গত।
বৈশিষ্ট্য:- ১) বৃহৎ কৃষিক্ষেত্র গড়ে ৩৫০ থেকে ৮০০ হেক্টর। ২) এই কৃষিতে প্রচুর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। ৩) এই কৃষিতে মাথাপিছু উৎপাদন বেশী ও হেক্টর প্রতি উৎপাদন কম। ৪) কৃষি যন্ত্রপাতি, জল সেচ ও অন্যান্য কৃষি পরিষেবার জন্য প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করা হয়। ৫) বেশিরভাগ অঞ্চলে গম ই হল প্রধান ও একমাত্র পছন্দসই
দানাশস্য।
উৎপন্ন ফসল:- প্রধান ফসল হল গম, ভুট্টা, তৈলবীজ ও বিভিন্ন ফল।
প্রশ্ন: বাগিচা কৃষি কাকে বলে?(Define Plantation Agriculture.)
উত্তর: সংজ্ঞা:- ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে প্রচুর মূলধন, শ্রমিক, উন্নত পরিকাঠামো ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার সাহায্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে রপ্তানি নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তাকে বাগিচা কৃষি বলা হয়।
অবস্থান:- ১)এশিয়ার দেশ গুলি হল – ভারত, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড প্রভৃতি। ২) দক্ষিণ আমেরিকার – ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য:- ১) বাগিচা কৃষি শ্রম প্রগাঢ় চরিত্রের। ২) বাগিচা কৃষি শ্রম নির্ভর বলে স্থানীয় শ্রমিকের উপর নির্ভরশীলতা অত্যন্ত বেশি। ৩) এই কৃষিতে প্রচুর মূলধন বিনিয়োগ করতে হয়। ৪) বাগিচা কৃষিতে কোনো একটি বিশেষ শস্য কে আন্তর্জাতিক চাহিদার উপর লক্ষ্য রেখে বৃহদায়তন এ উৎপাদন করা হয়।
উৎপন্ন ফসল:- বাগিচা কৃষির উল্লেখযোগ্য ফসল গুলি হল – চা, কফি, রাবার, কোকো প্রভৃতি।
আরও পড়ুন/ Important links
বাড়িতে বসে হাতের কাজ করে ইনকাম করার সহজ ১০ টি উপায়
প্রশ্ন: মিশ্র কৃষি কাকে বলে?(Define Mixed Farming.)
উত্তর: সংজ্ঞা:- যে কৃষি ব্যবস্থায় চাষের জমি থেকে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের সাথে সাথে ফল ও শাকসবজি উৎপাদন এবং দুগ্ধ, মাংস ও সারের প্রয়োজনে একই খামারে পশুপালন করা হয়। তাকে মিশ্র কৃষি বলা হয়।
অবস্থান:- মিশ্র কৃষি বর্তমানে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের কয়েকটি দেশ, যেমন – উত্তর – পশ্চিম ইউরোপের দেশ সমূহ, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর – পূর্ব
দিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া।
বৈশিষ্ট্য:- ১) মিশ্র কৃষি হল একধরনের উন্নত পর্যায়ের নিবিড় কৃষি।
২) এই পদ্ধতির সাহায্যে প্রতিবছর একই জমিতে ভিন্ন ভিন্ন ফসল উৎপাদন করে জমির স্বাভাবিক উর্বরতা রক্ষা করা হয়।
৩) বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মিশ্র চাষ সম্পাদিত হয়।
৪) মিশ্র চাষ এ উৎপাদিত দ্রব্যের আভ্যন্তরীণ বাজারে স্থায়ী চাহিদা থাকার দরুন কৃষকরা অনিশ্চয়তার হাত থেকে রেহাই পায়।
উদাহরণ:- মিশ্র কৃষিতে ফসল উৎপাদন ও পশুপালন উভয় ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জিত হয়। ফলে এই কৃষি অত্যন্ত লাভজনক।