বাস্তু তন্ত্রের ধারণা , বিভিন্ন সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো ( Concept, Different defination, Characteristics of Ecosystem)

বাস্তু তন্ত্রের ধারণা , বিভিন্ন সংজ্ঞা (Defination of ecosystem) ও বৈশিষ্ট্য প্রকারভেদ ও পরিভাষা সমন্ধে নিচে আলোচনা করা হলো

বাস্তু তন্ত্রের ধারণা(concept of ecosystem):

জীব গোষ্ঠী ও তার পরিবেশের বিভিন্ন উৎপাদনের মধ্যে আন্তঃক্রিয়া কতগুলি সুনির্দিষ্ট নিয়মে সুশৃঙ্খলভাবে চলে। এরা বিশেষ নিয়ম বা রীতিতে একত্রে কাজ করে। এরূপ শৃঙ্খলিত কার্যপদ্ধতিই হল বাস্তু তন্ত্র।
সুতরাং, কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশে বসবাসকারী জীব গোষ্ঠীর সঙ্গে পরিবেশের জড় উপাদানের আন্তঃক্রিয়া এবং জীব গোষ্ঠীর নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়ায় যে বসবাস রীতি গড়ে ওঠে, তাকে বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম বলে।

বাস্তু তন্ত্রের বিভিন্ন সংজ্ঞা (Different Definitions of Ecosystem):

বিভিন্ন বিশেষজ্ঞগণ বাস্তু তন্ত্রের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –

1. ট্যান্সলে -কৃত সংজ্ঞা(1935) :

যখন ভূপৃষ্ঠের কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে বিভিন্ন প্রকার সজীব ও নির্জীব উপাদানের মধ্যে এক জটিল আদানপ্রদানের আন্তঃসম্পর্কের সৃষ্টি হয় এবং তার ফলে ওখানে বসবাসের অনুকূল একটি প্রাকৃতিক অবস্থা বা তন্ত্র গড়ে ওঠে, তাকে বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম বলে।

2. লিন্ডেম্যান – কৃত সংজ্ঞা(1942):

কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ও নির্দিষ্ট সময়ে প্রাকৃতিক – রাসায়ানিক – জৈবিক ক্রিয়া – বিক্রিয়ার মাধ্যমে যদি একটি প্রণালী সৃষ্টি হয়, তখন তাকে বলে বাস্তুতন্ত্র।

3. ফসবার্গ – কৃত সংজ্ঞা(1963) :

কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমগ্র জীব গোষ্ঠীর সঙ্গে তার চারপাশের সব ধরনের অজৈব উপাদানের পারস্পরিক ক্রিয়া – বিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে সেই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে এবং ওই পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়েই সামগ্রিকভাবে বাস্তুতন্ত্র ক্রিয়াশীল থাকে। তাকে বাস্তুতন্ত্র বলে।

4. ওডাম – কৃত সংজ্ঞা (1971) :

যে পদ্ধতির সাহায্যে কোনো বসতি অঞ্চলের সমগ্র জীব কুল একে অপরের সঙ্গে এবং ওই অঞ্চলের অজৈব পরিবেশের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন করে একটি সুস্থিত প্রণালী বা তন্ত্র গঠন করে, এইসব ক্রিয়া পদ্ধতিকে বলে বাস্তুতন্ত্র।

 বাস্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য (characteristics of Ecosystem):

বাস্তুতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

1. নির্দিষ্ট ক্ষেত্র:

বাস্তুতন্ত্রের একটি নির্দিষ্ট এলাকা বা স্থান বা ক্ষেত্র থাকে, যা ছোট – বড়ো – মাঝারি যে কোনো আয়তনের হয়।

2. বিভিন্ন উপাদানের সমষ্টি:

একটি বাস্তু ক্ষেত্রের সব ধরনের সজীব ও নির্জীব উপাদান নিয়ে বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে।

3. নির্দিষ্ট সময়:

একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে এবং এজন্য সময়গত এককে এটি বিবেচিত হয়।

4. জটিল পদ্ধতি:

একটি বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সজীব ও নির্জীব উপাদানের পারস্পরিক ক্রিয়া – বিক্রিয়ার আন্তঃ সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল পদ্ধতিতে অগ্রসর হয়।

5. উন্মুক্ত প্রণালী:

বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে যে প্রণালী টি ক্রিয়াশীল থাকে, তার সঙ্গে পরিবেশের অনবরত শক্তি ও পদার্থের বিনিময় চলে। তাই বাস্তুতন্ত্র কে চরিত্রগত ভাবে উন্মুক্ত প্রণালী বলা যায়।

6. শক্তির উৎস সূর্য:

বাস্তুতন্ত্রে শক্তির মূল উৎস হল সৌরশক্তি এবং বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে এই শক্তিই তাপশক্তি, যান্ত্রিক শক্তি, রাসায়ানিক শক্তি ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয়।

7. উপাদানগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক:

বাস্তুতন্ত্রের মধ্য দিয়ে শক্তির প্রবাহ চলমান থাকে বলে বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

8. পুষ্টিচক্র:

বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে পুষ্টিচক্র আবর্তিত হয়।

 

বাস্তুতন্ত্র – সংক্রান্ত কয়েকটি পরিভাষা ( Terminologies Relating to Ecosystem ):

This image is showing different types of ecosystem

 

1. জীবভর বা বায়োমাস:

কোনো একটি নির্দিষ্ট বস্তুতান্ত্রিক পরিবেশে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের সাপেক্ষে সমস্ত প্রজাতির জীবের মোট শুষ্ক ওজন বা ভর কে জীব ভর বা বায়োমাস বলে।

2. বায়োম বা জীবভূমি:

কোনো সুবিশাল জলবায়ু অঞ্চলের অজৈব বা জড় উপাদানগুলির সঙ্গে সেই অঞ্চলের উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের মিথস্ক্রিয়ার ফলে যে সুনির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে,তাকে জীবভূমি বা বায়োম বলে।

3. ইকোটোন:

দুটি পৃথক বায়োমের সংযোগস্থল বরাবর অংশে দুটি বায়ো মেরই কিছুটা বৈশিষ্ট্য থেকে যায়। দুটি বায়োমের অন্তবর্তী এরূপ পরিবর্তনশীল অঞ্চলকে ইকোটোন বলে।

4. এজ এফেক্ট:

ইকোটোন অঞ্চলে দুটি সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ছাড়াও উচ্চ অভিযোজন ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ভিদ প্রজাতি দেখা যায়। ফলে ওই অঞ্চলে উদ্ভিদ প্রজাতির সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্য ও ঘনত্ব খুব বেশি হয়।এরূপ প্রজাতির বৈচিত্র্য ও ঘনত্ব বৃদ্ধির ঘটনাকে এজ এফেক্ট বলে।

5. হোমিওস্ট্যাটিস:

কোনো বাস্তুতন্ত্রে অজৈব উপাদানগুলি র পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জৈব উপাদান সমূহ তাদের কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে পরিবেশের সঙ্গে সমতা বজায় রাখলে সেই অবস্থাকে হোমিওস্ট্যাটিস বলে।

6. ইকোলজিকাল নিসে:

বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত জীব গোষ্ঠীর কোনো কোনো জীব খাদ্য, পুষ্টি ও শক্তি সংগ্রহের জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট অবস্থাকে বেছে নেয় এবং ওই নির্দিষ্ট অবস্থাকেই ওই জীবের ইকোলজিকাল নিসে বলে।

7. উত্তরণ:

একটি বাস্তুতন্ত্র যতই পরিণতি প্রাপ্তির দিকে এগোয় তা কম জটিল অবস্থা থেকে বেশি জটিল অবস্থার দিকে চালিত হয়। বাস্তুতন্ত্রের এই অবস্থার পরিবর্তনকে উত্তরণ বলে।

 

মন্তব্য করুন